প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই

প্রবাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। লন্ডন সময় শনিবার ভোর রাত ৩টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের সেন্ট ক্রিস্ট হসপাইসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। কিছুদিন কিংস কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁকে হসপাইসে স্থানান্তর করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন দুই মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক জানিয়েছেন, সুলতান মাহমুদ শরীফের জানাজার নামাজের সময়সূচি শিগগিরই জানানো হবে।
বর্ণাঢ্য জীবন ও রাজনীতি
১৯৪১ সালের ২৬ জানুয়ারি বরিশাল জেলার কতোয়ালী থানার চানপুরা ইউনিয়নের সারুখালী গ্রামে জন্ম সুলতান মাহমুদ শরীফের। স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ইকবাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৬২-’৬৩ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৬৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান এবং প্রবাসে ছাত্রনেতা হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লন্ডনে বিশ্ব জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন এবং এপ্রিল ১৯৭১-এ সরাসরি বাংলাদেশে ফিরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
প্রবাসে সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর
সুলতান মাহমুদ শরীফ প্রবাসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি রচনা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে কালো পতাকা উত্তোলনের সাহসী ঘটনার নেতৃত্ব দেন, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কিউসি পাঠানোর উদ্যোগে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ব্যারিস্টার নোরা শরীফ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর লন্ডন সফরের সময় সুলতান শরীফ তাঁর সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন। পরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১১ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী অবদান
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে যুবলীগ গঠিত হলে সুলতান শরীফ ছিলেন সেক্রেটারিয়েট সদস্য ও পরবর্তীতে প্রেসিডিয়াম সদস্য। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবিতে প্রবাসে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।
বাঙালি কমিউনিটির অভিভাবক
বিলেতের বাঙালি কমিউনিটিতে সুলতান মাহমুদ শরীফ ছিলেন এক অভিভাবকতুল্য নেতা। তার নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যে বাঙালিদের অধিকার রক্ষায় ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বার্থে বহু আন্দোলন ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রবাসে তার অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে ও প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটির ঐক্য ও নেতৃত্বে অসামান্য অবদান রাখা সুলতান মাহমুদ শরীফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগসহ প্রবাসী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ।