বিএমইউর অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবেন যেভাবে

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া এখন আরও সহজ। চলতি বছরের (২০২৫) শুরুতে হাসপাতালটি চালু করে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেবা। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে পছন্দের চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যাচ্ছে। ফলে রোগীদের আর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এ সেবার মাধ্যমে সময় বাঁচছে, ভোগান্তিও কমেছে। চিকিৎসাগ্রহণ প্রক্রিয়া হয়েছে আরও সহজ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী এ সেবার আওতায় অনলাইনে সিরিয়াল নিচ্ছেন। ডিজিটাল এ উদ্যোগ রোগীদের ভোগান্তি কমিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি
চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক রোগীরা এখন https://appointment.bsmmu.ac.bd/ticketing/f/opd_appointment ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের সিরিয়াল নিতে হবে।
ওয়েবসাইটে গিয়ে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা, লিঙ্গ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে পছন্দসই বিভাগ (যেমন— মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নিউরোলজি, গাইনি ইত্যাদি) ও চিকিৎসক নির্বাচন করতে হবে। এরপর সিস্টেমে খালি থাকা যেকোনো স্লট নির্বাচন করে আবেদন জমা দিতে হবে।
এসএমএসেই মিলছে সিরিয়াল
আবেদন জমা দেওয়ার পরপরই রোগীর মোবাইলে এসএমএস চলে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নম্বর (+৮৮০১৫৫২১৪৬২০২) থেকে। এতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ, সময়, বহির্বিভাগ ও কাউন্টার নম্বর উল্লেখ করা হয়।
এরপর রোগীকে নির্ধারিত তারিখে এসএমএসে উল্লিখিত সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত কাউন্টারে গিয়ে এসএমএস দেখিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে বহির্বিভাগের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
পুরোনো রিপোর্ট সঙ্গে আনার অনুরোধ
যদি রোগীর এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা অন্যান্য ল্যাব রিপোর্ট থেকে থাকে, তাহলে চিকিৎসক দেখানোর সময় সেগুলো সঙ্গে আনার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অন্তর্বিভাগ বা বহির্বিভাগ থেকে রেফার করা রোগীদের জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন নেই। তবে চিকিৎসকের নির্ধারিত ফলো-আপ তারিখ থাকলে সেক্ষেত্রেও প্রচলিত নিয়মে চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে।
নতুন এই সেবাপদ্ধতি নিয়ে কোনো আক্ষেপ, পরামর্শ বা মতামত জানানোর সুযোগও রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা পাঠানো যাবে নির্ধারিত ওই ওয়েবসাইটের ‘Feedback Box’-এ অথবা ই-মেইলে (eticketfeedback@bsmmu.ac.bd)।
রোগী-চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা
সাভার থেকে বিএমইউতে আসা ৪৫ বছর বয়সী রোগী জাহানারা বেগম বলেন, এই প্রথম হাসপাতালে আসতে আগেই সিরিয়াল পেয়েছি। আগে রাত ৩টায় রওনা দিয়ে এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এখন মোবাইলে আগেই সিরিয়াল পেয়ে গেছি। সময়মতো ডাক্তার দেখানো গেছে। এটা আসলেই অনেক সুবিধা।
বিএমইউর মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেমের ফলে একইসঙ্গে রোগী ও চিকিৎসকের সময় বাঁচছে।
তিনি বলেন, রোগীদের আগেই নির্ধারিত স্লট দেওয়া থাকায় চিকিৎসা দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেক বেশি শৃঙ্খলিত হয়েছে। রোগীকে রিস্ক ফ্যাক্টরসহ প্রস্তুত অবস্থায় পাচ্ছি— এটা চিকিৎসার মান বাড়াতে সাহায্য করছে।
যা বলছেন বিএমইউ উপাচার্য
অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেবার মাধ্যমে বিএমইউ ডিজিটাল হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টের ফলে একদিকে রোগীর ভোগান্তি কমছে, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও শৃঙ্খলিত হচ্ছে। আমরা চাই, এই ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বিএমইউ সত্যিকার অর্থে জনগণের আস্থার একটি আধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক।
উপাচার্য আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে রোগীদের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছি। আগামী দিনে এই ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও ব্যবহারবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা চাই, বিএমইউ শুধু চিকিৎসা নয়, স্বাস্থ্যসেবায়ও দেশের সবচেয়ে কার্যকর ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠুক।