মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট ২০২৫
Tuesday , 26 August 2025
০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ডেস্ক নিউজ

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ২৩ জুলাই ২০২৫

ব্রিটেন-ভারতে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর

ব্রিটেন-ভারতে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি বহুল প্রত্যাশিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এটি ভারতের জন্য এশিয়ার বাইরের প্রথম বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।

দুই দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফরে মোদী ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিষয়ে “বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি রাজা চার্লসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ব্রিটেনে শূন্য শুল্কে প্রবেশ করবে। এর মধ্যে রয়েছে রত্ন ও গহনা, বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। অন্যদিকে, ব্রিটেন ধাপে ধাপে ৯০ শতাংশ পণ্যের উপর ভারতের বাজারে শুল্ক ছাড় পাবে।

বিশেষ করে স্কচ হুইস্কির উপর শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে এবং ১০ বছরের মধ্যে তা ৪০ শতাংশে নামানো হবে। ব্রিটিশ গাড়ির ক্ষেত্রেও বড় ছাড় এসেছেবর্তমানে যেখানে ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক রয়েছে, সেটি নির্ধারিত কোটার মধ্যে ১০ শতাংশে নামানো হবে।

চুক্তির আলোচনায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আলোচনার সময় ভারত তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে অটল ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিলকর্মসংস্থান ভিসায় ছাড়, পেশাগত সনদের স্বীকৃতি, অস্থায়ী কর্মীদের জন্য জাতীয় বীমা অব্যাহতি।

চুক্তিটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর আগে উভয় দেশের সংসদে অনুমোদন পেতে হবে।

ভারতের জন্য সংবেদনশীল কৃষিখাত এই চুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের ৪০ শতাংশের বেশি শ্রমশক্তি এই খাতের সঙ্গে যুক্ত, তাই এটি আলোচনার বাইরে রাখা অপরিহার্য ছিল।

তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবিত কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম নিয়েও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এটি একটি প্রস্তাবিত কার্বন ট্যাক্স, যা ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আগত পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি তৈরি করে। ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হলেও আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “এই কার্বন ট্যাক্স পুরো চুক্তির উপকারিতাকে মুছে দিতে পারে। এটি এখনো চুক্তির ছায়া হিসেবে রয়ে গেছে।

চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য ভারতের সরকারি ক্রয়খাত উন্মুক্ত হওয়া। এতে করে পরিকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্রিটেনের কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি হবে।

এফটিএ চুক্তির বাইরে থেকে গেছে আর্থিক ও আইনি পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলো। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তির আলোচনা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা বিষয়েও অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।

ভারতের অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় বারু বলেন, “এই চুক্তি ভারতের ঐতিহ্যগত রক্ষণশীল বাণিজ্য নীতির বাইরে গিয়ে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে চূড়ান্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের পরই বোঝা যাবে চুক্তিটি কতটা ভারসাম্যপূর্ণ।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য এবং ভারতের কিছু শিল্পগোষ্ঠী, বিশেষ করে ভারতীয় হুইস্কি উৎপাদকরা, চুক্তির কয়েকটি শর্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, স্কচ হুইস্কির শুল্ক কমানোর ফলে স্থানীয় শিল্প ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতায় পড়তে পারে।

চুক্তিটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেবলছেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়