কুয়েতে ‘ফ্রি ভিসা’ বলে কোনো কিছু আইনি কাঠামোর মধ্যে নেই—এ তথ্য সকলের জানা থাকা সত্ত্বেও, এই কথাটিকেই ব্যবহার করে প্রতারণার বড় ফাঁদ পেতেছে একটি সুসংগঠিত অসাধু চক্র। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা নিরীহ প্রবাসীদের কাছ থেকে। অনেকের জন্য স্বপ্নের প্রবাস জীবন পরিণত হয়েছে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। এই চক্রের দৌরাত্ম্যে ক্ষুব্ধ কুয়েত প্রবাসী সমাজ এবং উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ দূতাবাসও।
‘ফ্রি ভিসা’ নামের এই প্রতারণার পদ্ধতি বেশ পুরনো হলেও তা এখনও সমানতালে চলছে। বাস্তবে কুয়েত সরকার ফ্রিতে কোনো ভিসা দেয় না। তবে কিছু কোম্পানি কর্মী সংকটে থাকলে নির্দিষ্ট কিছু খরচে লোক পাঠানোর সুযোগ তৈরি করে। এই ব্যবস্থাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে অসাধু দালাল ও চক্র ভিসা বিক্রি করে থাকে লক্ষাধিক টাকায়।
অফার হিসেবে বলা হয়—কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে খুশি সেই কাজ করতে পারবে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। কুয়েতের কঠোর শ্রম আইনে নির্দিষ্ট স্পন্সর বা কোম্পানির বাইরে কাজ করাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। ধরা পড়লে জরিমানা, জেল অথবা তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বহিষ্কারের শিকার হতে হয়।
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন সম্প্রতি কুয়েত প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবী, সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ফ্রি ভিসা’র নামে প্রতারণা যেন আর কোনো বাংলাদেশির জীবন ধ্বংস না করে—সেই লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি জানান, দূতাবাস থেকে নিয়মিত ভিসা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। সেইসাথে তিনি কুয়েতের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও কমিউনিটির সহযোগিতায় অসাধু দালাল চক্র চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতের কথায়, “অসাধু চক্রের সিন্ডিকেট যত বড়ই হোক, এটা ভেঙে দমন করা সম্ভব—শুধু দরকার প্রবাসীদের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা।”
একটি নির্দিষ্ট চক্র বাংলাদেশে বসে প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা বিক্রির কথা বলে লাখ টাকা আদায় করে। প্রবাসীরা কুয়েতে পৌঁছানোর পর দেখতে পান, তাদের ভিসা ‘Sponsor’-এর সঙ্গে সংযুক্ত, কিন্তু কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অল্প বেতনের কাজ কিংবা চুক্তিভঙ্গের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।