মাছবাজার দখলে চেষ্টায় বিএনপি নেতা, চসিকের নাম ভাঙিয়ে ঘর নির্মাণ

চট্টগ্রামের চাক্তাই ফিসারিঘাট এলাকায় মাছবাজার ঘাট দখলে নিতে বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দুই নেতা হলেন, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইয়াছিন চৌধুরী আছু এবং মহানগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও একই ওয়ার্ডের সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খান।
রোববার (২৫ মে) সকাল থেকে বাজারের বিভিন্ন অংশে ঘর নির্মাণে কাজ করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। অভিযোগ রয়েছে, এখনও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে ঘাটের ইজারা প্রদান করা না হলেও নিজেদের 'ইজারাদার' পরিচয় দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তারা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ওমর ফারুক নামের একজন জানান, তারা চসিকের পক্ষে 'খাস কালেকশনের' ঘর নির্মাণ করছেন এবং মেয়র বিষয়টি অবগত আছেন।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওমর ফারুক মূলত যুবদলের সক্রিয় সদস্য এবং অভিযুক্ত দুই বিএনপি নেতার অনুসারী।
এর আগে, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ না হতেই মাছবাজারের দুই পাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ব্যানার, যেখানে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের ছবিও ছিল। ব্যানারে চসিকের একটি স্মারক নম্বর উল্লেখ করে নিজেদের 'ইজারাদার' দাবি করা হয়। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই রাতারাতি ওই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়।
নথিপত্র অনুযায়ী, নথি অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে লিজ মূলে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর (১৪৭৭৫ নম্বর) এবং ২০১৫ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর তারিখে চট্টগ্রাম বন্দরের (১৫০৫৩ নম্বর) বোর্ড রেজুলেশন মূলে ফিসারীঘাটের ক্যাপিটাল ড্রেজিং থেকে সৃস্ট পরিত্যক্ত এই জমি (১,৭৩,২৬৩ বর্গফুট) বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড'কে ১৫ বছর মেয়াদের লিজ দেয়া হয়েছিলো। সরকারী বিধি মোতাবেক বন্দরের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিলো ২০১৫ সালে। সেই বন্দরকে বাৎসরিক ৬৩ লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে আসছে সোনালী যান্ত্রিক মৎসজীবি সমবায় সমিতি। বর্তমানে এটি দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক মাছ বাজার। কিন্তু ফিরিঙ্গিবাজার পুরোনো মাছ বাজার বন্দরের এই জমিতে স্থানান্তর নিয়ে সাবেক মন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেলের সরাসরি আপত্তি ছিলো। এছাড়া সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীও ফিরিঙ্গিবাজার থেকে ফিসারীঘাটে নতুন মাছ বাজার স্থানান্তরের ঘোর বিরোধী ছিলেন। সরকার পতনের পর ফিরিঙ্গি বাজার মাছ বাজারের (পুরাতন বাজার) সিন্ডিকেটের সাথে নতুন ফিসারীঘাট মাছবাজার বন্ধে চুক্তিবদ্ধ হন বিএনপি নেতারা।
এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো উচ্ছেদ বা স্থাপনা ভাঙচুর করা যাবে না।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল আলম বলেন, “এই জমিতে পূর্বে চসিকের খাস কালেকশনের বিষয়টি ছিল না। নতুন করে যদি থেকে থাকে, তবে মেয়র মহোদয় জানবেন।”
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চুক্তিবদ্ধ লিজ গ্রহীতা 'সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি' প্রতি বছর ৬৩ লাখ টাকা ভাড়ায় বাজারটি পরিচালনা করছে।
ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাঁদাবাজি ও দখলের কারণে তারা আতঙ্কে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “দরপত্রে অংশ না নিয়ে জোর করে দখল করতে আসা মানে সরকারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা। অথচ দিনের আলোয় ঘর তোলা হচ্ছে, প্রশাসন নিশ্চুপ।”